‘মুসলমান মানেই বদের হাড্ডি’ : তসলিমা


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১০, ২০২৩, ২:৩৪ অপরাহ্ন / ১৬৬
‘মুসলমান মানেই বদের হাড্ডি’ : তসলিমা

কেরালা স্টোরি নিয়ে চর্চা ক্রমশই বাড়ছে। শুধু তাই নয়, এই ছবিকে নিষিদ্ধ করার পর থেকেই যেন উত্তেজনা তুঙ্গে। আরও বেশি করে এই ছবি দেখার আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণ মানুষদের মধ্যে চালাচালি হচ্ছে হল প্রিন্ট লিংকও। তবে, এসবের মধ্যেই এই ছবি দেখে নিজের মতপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের চর্চিত এবং বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

তাঁর মন্তব্য সবসময় বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি করে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে, একথা তিনি সাফ জানিয়েছেন কেরালা অথবা কাশ্মীর স্টোরির বদলে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ স্টোরি বানানো উচিত। কিন্তু হঠাৎ একথা কেন বললেন তিনি? লেখিকা দেখে ফেলেছেন এই ছবি। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরলেন…

“দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখা হলো। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি , এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী। পৃথিবীর ১৯০ কোটি মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা ভাবলে নিশ্চয়ই গা শিউরে ওঠে। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না-জানা, ধর্মের নানা রকম রুল্স এবং রিচুয়ালস না-পালন করা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি।”

আরও পড়ুন [ বাংলায় নিষিদ্ধ The Kerala Story’, কিন্তু কেন? কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না শ্রীলেখা-মানসীরা! ]

নিজের বক্তব্য রাখার সঙ্গে সঙ্গে এও জানালেন, এই ছবি একেবারেই উন্নতমানের ফিচার ছবি নয়। সত্য তথ্যের সংখ্যা নেহাতই কম বরং অতিরঞ্জন বেশি। তাঁর সঙ্গে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী থেকে তাদের বর্বরতা দেখাতে গিয়ে এই ছবি যে একেবারেই আশাহত করেছে এও জানালেন তিনি। বললেন…”দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনওভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরান হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে, কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।”

আরও পড়ুন [ শুধু ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নয়, মুক্তির আগেই বিতর্কে জড়িয়ে বিরাট মুনাফা করে এই ছবিগুলি ]

এদিকে, রিলিজের কিছুদিনের মাথায় এই ছবিকে ব্যান করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই থেকেই শুরু হয়েছে দ্বৈত প্রতিক্রিয়া। ছবি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই বলিউড থেকে টলিউড অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন কেন? ছবি দেখতে দেওয়া হোক, মানুষ যাচাই করবেন কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে। অন্যদিকে, এই ছবিকে করমুক্ত করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। লেখিকা লিখছেন…”এটি আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনও কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদবুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প-সাহিত্যেই কোনও দর্শনের বিপক্ষে, কোনও জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প-সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান ! কেউ তো বাধা দেয়নি।”

তসলিমা নাসরিনের মন্তব্য:

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখা হলো। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি , এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী।

পৃথিবীর ১৯০ কোটি মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা ভাবলে নিশ্চয়ই গা শিউরে ওঠে। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না-জানা, ধর্মের নানা রকম রুল্স এবং রিচুয়ালস না-পালন করা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা শিক্ষিত সভ্য লোকের সংখ্যাও এই সম্প্রদায়ে নেহাত কম নয়। অ্যাগনস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি , খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব এক ধরণের কালচারাল আইডেনটিটি।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনওভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরান হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে, কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।

কেরালা লিটফেস্টে অংশ নিতে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কোঝিকড় বা কালিকটে বেশ কয়েকবার গিয়েছি আমি। কালিকটে , আমি অবাক হয়েছি, অনেক মুসলমান নারী পুরুষ আমার স্পিচ শুনতে এসেছে, এমনকী আমার অটোগ্রাফ নিয়ে গেছে। আমার নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও মুসলমানরা তসলিমা বিরোধী মিছিল করেনি, মিছিল বরং সেক্যুলার কলকাতায় করেছিল কট্টর মুসলমানেরা। কেরালার ৩২০০০ মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে, এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে বরং মুসলমানেরা বেশি যোগ দিয়েছে আইসিসে। এই দুটো দেশে আইসিসের আক্রমণও নেহাত কম হয়নি। দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনও কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদবুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প-সাহিত্যেই কোনও দর্শনের বিপক্ষে, কোনও জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প-সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান ! কেউ তো বাধা দেয়নি।

নামাজের সময় সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • ৪:৪৩ অপরাহ্ণ
  • ৬:৪৯ অপরাহ্ণ
  • ৮:১১ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ