যশোর হোমিও কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে চলছে তুলকালাম কান্ড। প্রতিনিয়ত জন্ম দিচ্ছেন নতুন নতুন নাটকীয়তা। এতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। ঘটনার শুরুটা অধ্যক্ষ ডা. হাফিজুর রহমানকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত এই অধ্যক্ষ সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছেন নিজের রুপও। আওয়ামী লীগের নৌকা ছেড়ে রাতারাতি উঠে পড়েছেন বিএনপির ঘাড়ে। ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবেও পরিচয় দিচ্ছেন বিভিন্ন মহলে। তবে তার অতীতের সব কান্ড ফাঁস করে দেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একে একে বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষের নানান অপকর্ম।গত ৩ অক্টোবর ২০২৪ কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের প্রতি অনাস্থা এনে হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষকরা াভিযোগ করেন,নিয়োগ ও প্রতিবছর ফরম ফিলআপ দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠানের ঘর ভাড়া উত্তোলনে ঘাপলাবাজি ও ভুয়া বিল ভাউচারে সিদ্ধহস্ত ডাক্তার হাফিজুর রহমান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১২৯ টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উল্লেখ করে জানান, এরমধ্যে ৫৯ টি অভিযোগ তাকে অবগত করানো হয়েছে। এরপরও ডাক্তার হাফিজুর রহমান না শুধরে উল্টো প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসককে ভুল বুঝিয়ে চেয়ার দখল করে রয়েছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও বেশুমার অর্থ বাণিজ্য বিগত কমিটি কয়েক দফা ধরে ফেলে। তখন তিনি দিশেহারা হয়ে নানা তালবাহানায় সময় কাটিয়ে বিগত কমিটির মেয়াদ পার করেছেন। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এবং বিগত কমিটি তার আর্থিক দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে অ্যাকশান নিতে গেলে তিনি আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার চাটুকারিতা করে নানা অপরাধ আড়াল করেন। আবার এখন তিনি বিএনপি নেতা সেজে সময় পার করছেন আর চেয়ার ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
অনাস্থা বৈঠকে তথ্য দেয়া হয় অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ডাক্তার হাফিজুর রহমার প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।প্রতিবছর ডিএইচএমএস পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় কমপক্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর ফরম নিজ দায়িত্বে রাখেন অধ্যক্ষ। ফরম ফিলআপ বাবদ ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা, আবার দু’হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা আদায় করলেও ‘মওকুফ করা হয়েছে এবং বাকি রয়েছে’ দাবি করে প্রতি ফরম ফিলআপ বাবদ নামমাত্র নয় হাজার টাকা করে ব্যাংকে জমা দেন। এভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। গত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হলে প্রথমবারের মতো ফরম ফিলআপ বাবদ এক কোটিরও বেশি টাকা জমা হয়েছে অথচ প্রতিবছর ৬০-৭০ লাখ টাকা হতো।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, একজন প্রভাষক নিয়োগে তিন লাখ, কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগে দু’লাখ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান।
প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদন্নোতির ক্ষেত্রে ছয়জনের কাছ থেকে নগদ ৮০ হাজার করে ছয়জন চার লাখ ৬০ হাজার টাকাও নিয়েছেন তিনি। একজন প্রভাষকের খালাতো ভাইকে চুক্তিভিত্তিক অফিস সহকারী নিয়োগ দিয়ে আড়াই লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। অফিস সহকারীকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদন্নোতির নাম করে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। অধ্যক্ষের মামা শ্বশুরকে সহকারী মেডিকেল অফিসার পদে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দিয়েও সুবিধা নিয়েছেন অধ্যক্ষ।
এছাড়া, আরও অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের শতবার্ষিকী উদযাপনে ভুয়া বিল ভাউচারে কয়েক লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন এবং কনটিজেন্সি বিলের নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে বিল ভাউচার করে লাগাতার অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন অধ্যক্ষ।
এখানেই শেষ নয়,শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিনা ছুটিতে বিদেশে গমন এবং কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব না দিয়ে প্রতিষ্ঠান ১৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ। এঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও ৩ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।
এদিকে, গত ৫ অক্টোবর বিক্ষুদ্ধরা ওই অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগ করান। এ ঘটনায় মারধর,হামলা,ভাংচুরের অভিযোগ এনে মামলা করেন অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান। পরে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যশোর হোমিও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন :