১০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

    কীভাবে ফিরছে গাজাবাসী, কী বলছে তারা

    • Reporter Name
    • Update Time : ০৭:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
    • ১০৩ Time View

    গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা, মিশ্র অনুভূতি ও স্থায়ী শান্তির প্রত্যাশা গাজা, ফিলিস্তিন: দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির হাত ধরে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। গত শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে একদিকে যেমন স্বস্তি ফিরেছে, তেমনি রয়েছে স্থায়ী শান্তি নিয়ে সংশয় ও গভীর বেদনা। সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাড়ি ফেরা ফিলিস্তিনিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।

    স্বস্তি, বেদনা ও প্রত্যাশা

    গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই, যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত ও বেদনাক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছি।” ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজার বাড়ি গাজা নগরীতে। বাড়ি ফিরে সেটি অক্ষত দেখার প্রার্থনা করতেন তিনি। মুর্তজা বলেন, “আমি সব সময় এই প্রার্থনা করতাম, আমি গাজা নগরীতে আমার বাড়িতে ফিরে যেন দেখি, আমার বাড়িঘর ঠিক আছে, গুঁড়িয়ে যায়নি।” বর্তমানে তার একমাত্র প্রত্যাশা এই যুদ্ধ যেন চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। তিনি আকুল আবেদন জানিয়েছেন, “আমরা শুধু চাই, যুদ্ধটা চিরতরে শেষ হোক। আমাদের যেন আর কোনো দিন পালাতে না হয়।” ৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদায়েহ, যিনি যুদ্ধের শুরুতেই বাড়িঘর ছেড়েছিলেন, অবশেষে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। যুদ্ধবিরতিতে খুশি হলেও তিনি গভীর বেদনা নিয়ে বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি ফেরায় আমি খুশি। যদিও আমি এমন এক মা, যে যুদ্ধে নিজের এক ছেলে এবং এক মেয়েকে হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তারপরও এই যুদ্ধবিরতি আনন্দ ফিরিয়েছে—আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরছি।” 

    চুক্তির পটভূমি ও শর্তাবলি

    গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’-র প্রথম ধাপ হিসেবে এই যুদ্ধবিরতিকে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বুধবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকের পর এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি আসে। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনও (পিএলএফপি) আলোচনায় অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা চুক্তিটির অনুমোদন দেওয়ার পর শুক্রবার ভোর থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। 

    চুক্তির মূল শর্তগুলো নিম্নরূপ:

    সেনা প্রত্যাহার: যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরিয়ে নেবে।

    জিম্মি ও বন্দী বিনিময়:

    ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ আগামী সোমবার দুপুর নাগাদ হামাস গাজায় বন্দী জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেবে। এরপরে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ত্রাণ সহায়তা: চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোনো বাধা ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা রয়েছে। আংশিক সেনা প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনিদের যাত্রা বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার কিছু অঞ্চল থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী এই উত্তরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করেছিল। প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের গত দুই বছর ধরে একাধিকবার নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়েছে।

    ×
    15 November 2025 22:11


    Tag :

    Write Your Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Save Your Email and Others Information

    About Author Information

    জনপ্রিয় পোস্ট

    কীভাবে ফিরছে গাজাবাসী, কী বলছে তারা

    Update Time : ০৭:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

    গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা, মিশ্র অনুভূতি ও স্থায়ী শান্তির প্রত্যাশা গাজা, ফিলিস্তিন: দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির হাত ধরে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। গত শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে একদিকে যেমন স্বস্তি ফিরেছে, তেমনি রয়েছে স্থায়ী শান্তি নিয়ে সংশয় ও গভীর বেদনা। সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাড়ি ফেরা ফিলিস্তিনিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।

    স্বস্তি, বেদনা ও প্রত্যাশা

    গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই, যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত ও বেদনাক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছি।” ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজার বাড়ি গাজা নগরীতে। বাড়ি ফিরে সেটি অক্ষত দেখার প্রার্থনা করতেন তিনি। মুর্তজা বলেন, “আমি সব সময় এই প্রার্থনা করতাম, আমি গাজা নগরীতে আমার বাড়িতে ফিরে যেন দেখি, আমার বাড়িঘর ঠিক আছে, গুঁড়িয়ে যায়নি।” বর্তমানে তার একমাত্র প্রত্যাশা এই যুদ্ধ যেন চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। তিনি আকুল আবেদন জানিয়েছেন, “আমরা শুধু চাই, যুদ্ধটা চিরতরে শেষ হোক। আমাদের যেন আর কোনো দিন পালাতে না হয়।” ৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদায়েহ, যিনি যুদ্ধের শুরুতেই বাড়িঘর ছেড়েছিলেন, অবশেষে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। যুদ্ধবিরতিতে খুশি হলেও তিনি গভীর বেদনা নিয়ে বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি ফেরায় আমি খুশি। যদিও আমি এমন এক মা, যে যুদ্ধে নিজের এক ছেলে এবং এক মেয়েকে হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তারপরও এই যুদ্ধবিরতি আনন্দ ফিরিয়েছে—আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরছি।” 

    চুক্তির পটভূমি ও শর্তাবলি

    গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’-র প্রথম ধাপ হিসেবে এই যুদ্ধবিরতিকে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বুধবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকের পর এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি আসে। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনও (পিএলএফপি) আলোচনায় অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা চুক্তিটির অনুমোদন দেওয়ার পর শুক্রবার ভোর থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। 

    চুক্তির মূল শর্তগুলো নিম্নরূপ:

    সেনা প্রত্যাহার: যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরিয়ে নেবে।

    জিম্মি ও বন্দী বিনিময়:

    ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ আগামী সোমবার দুপুর নাগাদ হামাস গাজায় বন্দী জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেবে। এরপরে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ত্রাণ সহায়তা: চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোনো বাধা ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা রয়েছে। আংশিক সেনা প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনিদের যাত্রা বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার কিছু অঞ্চল থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী এই উত্তরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করেছিল। প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের গত দুই বছর ধরে একাধিকবার নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়েছে।

    ×
    15 November 2025 22:11