১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

    অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনালে যেভাবে হবে

    • Reporter Name
    • Update Time : ০২:২৭:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
    • ৬১ Time View

    🔶 মামলার প্রেক্ষাপট

    আসামির সংখ্যা: মোট ৩০ জন,  মূল আসামিরা: শেখ হাসিনা (সাবেক প্রধানমন্ত্রী), আসাদুজ্জামান খান কামাল (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), বেনজির আহমেদ (সাবেক পুলিশ প্রধান), এবং র‍্যাবের দুই সাবেক মহাপরিচালক। সেনা কর্মকর্তা: ২৪ জন (এর মধ্যে ১৪ জন কর্মরত, ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত)।অভিযোগ: আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতন—যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (মানবতাবিরোধী অপরাধ) হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।গ্রেফতারি নির্দেশ: ২২ অক্টোবরের মধ্যে সবাইকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

    🔶 আইনগত প্রশ্ন: সেনা কর্মকর্তাদের বিচার কোন আইনে হবে?

    প্রধান বিতর্ক হচ্ছে—

    “কর্মরত সেনা সদস্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার সামরিক আইনে হবে, নাকি সাধারণ (ফৌজদারি বা ট্রাইব্যুনাল) আইনে?”

    ⚖️ আইনি অবস্থান অনুযায়ী: সামরিক আইন (Army Act): পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন: দাপ্তরিক অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গ ইত্যাদি। প্রচলিত ফৌজদারি আইন (Criminal Law): যদি কোনো সেনা কর্মকর্তা সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে অপরাধ করেন (যেমন হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন), তবে এটি সিভিল কোর্টেই বিচারযোগ্য। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা (২০১৪)—এই নজিরেই ফৌজদারি আইনে তিন সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩: এটি একটি সংবিধান-সুরক্ষিত আইন। এই আইনে বলা আছে—“ডিসিপ্লিনারি ফোর্স” অর্থাৎ সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, র‍্যাব—সবাই এই আইনের আওতায় আসতে পারে। তাই কর্মরত সেনা সদস্যদের বিচারও এই আইনে করা যাবে, সামরিক আদালতে নেওয়ার সুযোগ নেই। 

    🔶 সাম্প্রতিক সংশোধনী (৬ অক্টোবর, ২০২৫)  আইন মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে ২০(সি) ধারা যুক্ত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে: কেউ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলে তিনি আর কোনো সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। ফলে: অভিযুক্ত ১৪ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তা কার্যত চাকরিতে বহাল থাকতে পারবেন না। তারা অভিযুক্ত হিসেবে পদ থেকে অপসারিত বা স্থগিত থাকবেন, যতদিন না আদালত খালাস দেন।

    🔶 বিশেষজ্ঞদের মতামত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: “সেনা কর্মকর্তা পেশাগত দায়িত্বে অপরাধ করলে সামরিক আইনে বিচার হতে পারে; কিন্তু সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে সিভিল আদালতে বিচার বাধাহীন।” মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী: “হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতির মতো ফৌজদারি অপরাধ সাধারণ আদালতেই বিচার হয়; তবে সরকার চাইলে সামরিক আদালতে নিতে পারে—তবে সেটি বিচারকের অনুমতি সাপেক্ষ।”

    প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম:

    “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত, এবং এটি আর্মি বা অন্য ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের বিচার করতেও সক্ষম। কর্মরত সেনাদেরও এই আইনে বিচার করা যাবে।”

    🔶 সারসংক্ষেপে: বিষয় মূল ব্যাখ্যা মামলার ধরন মানবতাবিরোধী অপরাধ (গুম, নির্যাতন) আসামি সংখ্যা ৩০ জন সেনা কর্মকর্তা ১৪ কর্মরত + ১০ অবসরপ্রাপ্ত প্রযোজ্য আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনী প্রভাব অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীরা পদে থাকতে পারবেন না বিচার কোথায় হবে ট্রাইব্যুনালে, সামরিক আদালতে নয় উল্লেখযোগ্য নজির নারায়ণগঞ্জ সাত খুন মামলা (২০১৪)

    ×
    10 November 2025 22:28


    Tag :

    Write Your Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Save Your Email and Others Information

    About Author Information

    জনপ্রিয় পোস্ট

    অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনালে যেভাবে হবে

    Update Time : ০২:২৭:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

    🔶 মামলার প্রেক্ষাপট

    আসামির সংখ্যা: মোট ৩০ জন,  মূল আসামিরা: শেখ হাসিনা (সাবেক প্রধানমন্ত্রী), আসাদুজ্জামান খান কামাল (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), বেনজির আহমেদ (সাবেক পুলিশ প্রধান), এবং র‍্যাবের দুই সাবেক মহাপরিচালক। সেনা কর্মকর্তা: ২৪ জন (এর মধ্যে ১৪ জন কর্মরত, ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত)।অভিযোগ: আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতন—যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (মানবতাবিরোধী অপরাধ) হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।গ্রেফতারি নির্দেশ: ২২ অক্টোবরের মধ্যে সবাইকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

    🔶 আইনগত প্রশ্ন: সেনা কর্মকর্তাদের বিচার কোন আইনে হবে?

    প্রধান বিতর্ক হচ্ছে—

    “কর্মরত সেনা সদস্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার সামরিক আইনে হবে, নাকি সাধারণ (ফৌজদারি বা ট্রাইব্যুনাল) আইনে?”

    ⚖️ আইনি অবস্থান অনুযায়ী: সামরিক আইন (Army Act): পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন: দাপ্তরিক অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গ ইত্যাদি। প্রচলিত ফৌজদারি আইন (Criminal Law): যদি কোনো সেনা কর্মকর্তা সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে অপরাধ করেন (যেমন হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন), তবে এটি সিভিল কোর্টেই বিচারযোগ্য। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা (২০১৪)—এই নজিরেই ফৌজদারি আইনে তিন সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩: এটি একটি সংবিধান-সুরক্ষিত আইন। এই আইনে বলা আছে—“ডিসিপ্লিনারি ফোর্স” অর্থাৎ সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, র‍্যাব—সবাই এই আইনের আওতায় আসতে পারে। তাই কর্মরত সেনা সদস্যদের বিচারও এই আইনে করা যাবে, সামরিক আদালতে নেওয়ার সুযোগ নেই। 

    🔶 সাম্প্রতিক সংশোধনী (৬ অক্টোবর, ২০২৫)  আইন মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে ২০(সি) ধারা যুক্ত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে: কেউ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলে তিনি আর কোনো সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। ফলে: অভিযুক্ত ১৪ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তা কার্যত চাকরিতে বহাল থাকতে পারবেন না। তারা অভিযুক্ত হিসেবে পদ থেকে অপসারিত বা স্থগিত থাকবেন, যতদিন না আদালত খালাস দেন।

    🔶 বিশেষজ্ঞদের মতামত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: “সেনা কর্মকর্তা পেশাগত দায়িত্বে অপরাধ করলে সামরিক আইনে বিচার হতে পারে; কিন্তু সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে সিভিল আদালতে বিচার বাধাহীন।” মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী: “হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতির মতো ফৌজদারি অপরাধ সাধারণ আদালতেই বিচার হয়; তবে সরকার চাইলে সামরিক আদালতে নিতে পারে—তবে সেটি বিচারকের অনুমতি সাপেক্ষ।”

    প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম:

    “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত, এবং এটি আর্মি বা অন্য ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের বিচার করতেও সক্ষম। কর্মরত সেনাদেরও এই আইনে বিচার করা যাবে।”

    🔶 সারসংক্ষেপে: বিষয় মূল ব্যাখ্যা মামলার ধরন মানবতাবিরোধী অপরাধ (গুম, নির্যাতন) আসামি সংখ্যা ৩০ জন সেনা কর্মকর্তা ১৪ কর্মরত + ১০ অবসরপ্রাপ্ত প্রযোজ্য আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনী প্রভাব অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীরা পদে থাকতে পারবেন না বিচার কোথায় হবে ট্রাইব্যুনালে, সামরিক আদালতে নয় উল্লেখযোগ্য নজির নারায়ণগঞ্জ সাত খুন মামলা (২০১৪)

    ×
    10 November 2025 22:28