
গুলশানে বারের বাউন্সার-কর্মচারীর হাতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু: ৭ জন রিমান্ডে, প্রকাশ্যে মারধরের কারণ ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের বাউন্সার ও কর্মচারীদের নির্মম মারধরে ব্যবসায়ী দবিরুল ইসলাম (৫১) নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। নিহত ব্যবসায়ীর পরিবার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
ঘটনার বিবরণ ও মামলার চিত্র
ঘটনার তারিখ ও স্থান: গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে গুলশান-১ নম্বরের প্লট ৫১–এ অবস্থিত ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মামলা: নিহত দবিরুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামি গ্রেপ্তার: মামলার প্রেক্ষিতে ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে বারটির কর্মকর্তাসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা: শামীম আহমেদ (ব্যবস্থাপক), তোফাজ্জেল হোসেন (গ্রাহক), মো. রাকিব, মো. কাউসার, রুবেল মাহমুদ ও প্লাবন মিয়া (বাউন্সার/কর্মচারী)। রিমান্ড: গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর, ২০২৫) আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মারধরের কারণ: বিল পরিশোধ ও কথা-কাটাকাটি

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় মারধরের কারণ সম্পর্কে নতুন তথ্য মিলেছে: প্রাথমিক সূত্র: তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বারের ভেতরে বিল পরিশোধ করা নিয়ে গ্রাহক তোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে দবিরুল ইসলামের কথা-কাটাকাটি হয়। দবিরুল ইসলাম বিল পরিশোধ না করে বেরিয়ে যেতে চাইলে বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে বাধা দেন। এ থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ফুটেজের তথ্য: বারের সামনের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মারধরের দৃশ্য ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, বারের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন দবিরুল। একপর্যায়ে দবিরুল শামীমকে একটি থাপ্পড় দেন। নৃশংস হামলা: থাপ্পড় দেওয়ার পরই শামীম ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে দবিরুলকে মারধর শুরু করেন। দবিরুল মাটিতে পড়ে গেলে একজন তাঁর মাথায় লাথি দেন। হামলার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মিলে দবিরুলকে টেনেহিঁচড়ে পাশের একটি রাস্তায় ফেলে দেন।
মৃত্যু ও পরিবারের দাবি
১৪ অক্টোবর রাতে হামলা হওয়ার পর দবিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা রাতে তাঁর ফোন বন্ধ পান। পরদিন ভোরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাঁকে গুলশান-১ নম্বরের একটি ভবনের পেছনের রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথম স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে সেখানেই তিনি মারা যান। নিহত ব্যবসায়ীর ছেলে তায়েব ইসলাম বলেন, “আমার বাবাকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বারের মালিকানা ও অবৈধ মদ বিক্রির অভিযোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র ধরে তদন্তে বারের মালিকানা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে: মালিকানা সংযোগ: ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের পাঁচজন মালিকের মধ্যে মামুন তাজুল ইসলাম ভুইয়া নামের একজন হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সুমনুর রহমানের ভাই। অভিযোগ রয়েছে, মানিকগঞ্জে বদলি হওয়ার আগে সুমনুর রহমান নিজেই পরিচালক হিসেবে ভাইয়ের নামে এ ব্যবসা করতেন। বক্তব্যের জন্য সুমনুর রহমানকে ফোন করা হলেও তাঁর সাড়া মেলেনি। অবৈধ ব্যবসা: গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ওই বারে শুধু দেশি মদ বিক্রির অনুমোদন ছিল। কিন্তু তাঁরা অবৈধভাবে বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করে আসছিলেন। তদন্তে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Reporter Name 



















