
এই ধরনের সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ভারতের স্ব-ঘোষিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে তার বর্তমান রাজনৈতিক অনুশীলনের মধ্যে দৃশ্যমান বৈপরীত্য।
- সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ও বৈষম্য: সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী (Hindu Nationalist) রাজনীতির উত্থান, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে, দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর মতো পদক্ষেপগুলি বৈষম্যমূলক এবং ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয়।
- গণতান্ত্রিক সূচকে পতন: আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ (EIU)-এর গণতন্ত্র সূচকে ভারতের ক্রমাবনতি এই সমালোচকদের বক্তব্যকে শক্তিশালী করেছে। নাগরিক স্বাধীনতা (Civil Liberties), সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিরোধী দলের প্রতি অসহিষ্ণুতা হ্রাসের ফলে ভারতকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ (Flawed Democracy) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
- প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা: বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ওপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির (যেমন ED, CBI) কথিত ব্যবহার এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা গণতন্ত্রের দুর্বলতা হিসেবে দেখানো হয়।
কাশ্মীর পরিস্থিতি: জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট ও নিরাপত্তা নিষেধাজ্ঞা জারি রাখাও আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের গণতন্ত্রের দুর্বলতা হিসেবে সমালোচিত হয়েছে।
🇸🇦 মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি কেন?
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি এই আহ্বানটি মূলত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মতো সংবেদনশীল আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ভারতের পরিবর্তিত এবং আপাত-সুবিধাবাদী অবস্থানের কারণে এসেছে।
- ইসরায়েলের প্রতি নীরব সমর্থন: ঐতিহ্যগতভাবে ভারত ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমালোচকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত চলাকালীন, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময়, ভারত প্রায়শই নিরপেক্ষ থাকার ভান করলেও বাস্তবে ইসরায়েলকে ‘নীরব সমর্থন’ জুগিয়ে চলেছে।
- নৈতিকতার বদলে স্বার্থ-নির্ভর কূটনীতি: মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো, যারা সাধারণত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়, তাদের কাছে ভারতের এই নীরবতা বা আপাত-পক্ষপাতিত্ব একটি বিপরীত বার্তা দিচ্ছে। সমালোচকরা মনে করেন, ভারত তার নৈতিক অবস্থান বিসর্জন দিয়ে কেবল তার অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে।
- মুসলিম বিশ্বের প্রতি বার্তা: ভারতের এই দ্বৈত নীতি মুসলিম বিশ্বের কাছে এই বার্তা দিচ্ছে যে, ভারতের কাছে তাদের ধর্মীয় ও মানবিক অনুভূতি গৌণ, যদি না এতে ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে (বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলো, যাদের সাথে ভারতের গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক রয়েছে) এই সমালোচকরা আহ্বান জানাচ্ছেন, যেন তারা ভারতের এই “ভণ্ডামি”-কে আমলে নেয় এবং তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করে।

Reporter Name 



















