০৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

    আলীকদমে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা, ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ

    • Reporter Name
    • Update Time : ১২:০০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
    • ৪১ Time View

    আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

    বান্দরবানের আলীকদমে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো—রেংপুং হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাইতুমণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মেনকিউ মেনকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই তিনটি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। তবে দুজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

    অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন:

    উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া জেলা পরিষদের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এই ১৩ জন শিক্ষক কর্মস্থলে যাননি এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেননি। কিন্তু তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন। বেতন নিয়ে তামাক চাষসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ করেছেন। এমনকি নিজেরা অনুপস্থিত থেকে ‘বর্গা শিক্ষক’ (নিজের পরিবর্তে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া) নিয়োগ দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে জেলা পরিষদ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ১৩ জনের কেউই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল এই তিন বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। এরপরই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতি, বর্গা শিক্ষক নিয়োগ ও ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন-ভাতা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রধান ছিলেন জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা।

    শিক্ষকদের বক্তব্য:

    অভিযোগের বিষয়ে রাইতুমণিপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংসাথুই মারমা জানান, তিনি এক বছর প্রশিক্ষণে ছিলেন এবং এ সময় বিদ্যালয় কীভাবে চলেছে তা জানেন না। তিনি দুর্গমতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সব শিক্ষকের পক্ষে, বিশেষ করে নারী শিক্ষকের পক্ষে প্রতিদিন উপস্থিতি থাকা সম্ভব হয় না, তবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে না। মেনকিউ মেনকপাড়া বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজিব ম্রো দুর্গমতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে আগে বিদ্যালয়ে থাকার পরিবেশ ছিল না বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে তাঁরা পাড়াতেই থাকছেন। তবে তিনি নারী শিক্ষকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানান। আলীকদম উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিদ্যালয়গুলো অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় হওয়ায় পরিদর্শনে যাওয়া কঠিন। তবে জেলা পরিষদের তদন্তের পর শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

    ×
    10 November 2025 20:15


    Tag :

    Write Your Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Save Your Email and Others Information

    About Author Information

    জনপ্রিয় পোস্ট

    আলীকদমে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা, ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ

    Update Time : ১২:০০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

    আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

    বান্দরবানের আলীকদমে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো—রেংপুং হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাইতুমণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মেনকিউ মেনকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই তিনটি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। তবে দুজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।

    অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন:

    উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া জেলা পরিষদের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এই ১৩ জন শিক্ষক কর্মস্থলে যাননি এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেননি। কিন্তু তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন। বেতন নিয়ে তামাক চাষসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ করেছেন। এমনকি নিজেরা অনুপস্থিত থেকে ‘বর্গা শিক্ষক’ (নিজের পরিবর্তে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া) নিয়োগ দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে জেলা পরিষদ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ১৩ জনের কেউই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল এই তিন বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। এরপরই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতি, বর্গা শিক্ষক নিয়োগ ও ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন-ভাতা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রধান ছিলেন জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা।

    শিক্ষকদের বক্তব্য:

    অভিযোগের বিষয়ে রাইতুমণিপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংসাথুই মারমা জানান, তিনি এক বছর প্রশিক্ষণে ছিলেন এবং এ সময় বিদ্যালয় কীভাবে চলেছে তা জানেন না। তিনি দুর্গমতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সব শিক্ষকের পক্ষে, বিশেষ করে নারী শিক্ষকের পক্ষে প্রতিদিন উপস্থিতি থাকা সম্ভব হয় না, তবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে না। মেনকিউ মেনকপাড়া বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজিব ম্রো দুর্গমতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে আগে বিদ্যালয়ে থাকার পরিবেশ ছিল না বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে তাঁরা পাড়াতেই থাকছেন। তবে তিনি নারী শিক্ষকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানান। আলীকদম উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিদ্যালয়গুলো অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় হওয়ায় পরিদর্শনে যাওয়া কঠিন। তবে জেলা পরিষদের তদন্তের পর শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

    ×
    10 November 2025 20:15