
🔷 মামলার সারসংক্ষেপ
মামলার নাম: জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা
আসামি:
শেখ হাসিনা — সাবেক প্রধানমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামাল — সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন — সাবেক আইজিপি (রাজসাক্ষী হয়েছেন)
অভিযোগ: মানবতাবিরোধী অপরাধ (গণহত্যা, নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়ন ও অন্যান্য নৃশংসতা)
অভিযোগ গঠন: ১০ জুলাই ২০২৫
অভিযোগ সংখ্যা: ৫টি
মোট পৃষ্ঠা: ৮,৭৪৭
তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা
জব্দ তালিকা ও প্রমাণ: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা
শহীদ তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা
মোট সাক্ষী: ৮১ জন (সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ ৫৪ জনের)
মোট কার্যদিবস: ২৮
বর্তমান অবস্থা: সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ → যুক্তিতর্ক (arguments) শুরু ১২ অক্টোবর
🔷 আদালতের বর্তমান পর্যায়
৮ অক্টোবর (বুধবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য শফিউল আলম মাহমুদ এবং মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য রবিবার, ১২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
🔷 সাক্ষ্যগ্রহণের মূল দিকসমূহ
🧑💼 প্রধান সাক্ষী: তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর
তিনি রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী।
২৮–৩০ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী সাক্ষ্য দেন।
৬–৮ অক্টোবর পর্যন্ত জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
তার জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
৩,০৫,০০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের ওপর।
১৭টি ভিডিও প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়, যেখানে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণের দৃশ্য দেখা যায়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিবিসি, আল–জাজিরা, আমার দেশ প্রভৃতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওগুলোও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
⚖️ প্রতিরক্ষা পক্ষের যুক্তি
আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, “পুলিশ বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছিল”, এটি পরিকল্পিত গণহত্যা নয়।
তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।
⚖️ প্রসিকিউশন পক্ষ
নেতৃত্বে: মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম.এইচ. তামিম
সহযোগী: আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ, মামুনুর রশীদ প্রমুখ
তারা যুক্তি দেন, জুলাই-আগস্টে যা ঘটেছে তা ছিল “রাষ্ট্রনেতৃত্বাধীন সামরিক–বেসামরিক যৌথ হত্যাযজ্ঞ”।
শহীদ পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও প্রমাণ একত্রে “মানবতাবিরোধী অপরাধের নিদর্শন” বহন করে।
🔷 সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র আদালতে দেখানো হয়।
জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে নিহতদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে নিশ্চিত নয়, তবে তদন্ত রিপোর্টে “হাজারাধিক” নিহত ও “লাখাধিক আহত”-এর কথা বলা হয়েছে।
রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের সাক্ষ্যে স্বীকার করেছেন, “উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই অভিযান চালানো হয়।”
🔷 প্রেক্ষাপট: জুলাই–আগস্ট আন্দোলন
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট মাসে দেশজুড়ে ছাত্র–জনতার গণআন্দোলন শুরু হয়।
মূল দাবি ছিল:
শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
সরকারবিরোধী আন্দোলনের দমনমূলক তৎপরতা বন্ধ
কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী সংঘর্ষে, এবং বিভিন্ন জেলায় পুলিশের গুলিতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
এই ঘটনাকেই “জুলাই গণহত্যা” নামে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
🔷 পরবর্তী ধাপ
১২ অক্টোবর (রবিবার):
উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে।
এরপর আদালত রায়ের তারিখ সংরক্ষণ (CAV) করতে পারে।
রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের শুরুতে।
🔷 বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি
এই মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক–বিচারিক প্রক্রিয়াগুলোর একটি হয়ে উঠেছে, কারণ:
প্রথমবার কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে।
মামলাটিতে অত্যন্ত বিপুল পরিমাণ প্রমাণ ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আগ্রহী।

Reporter Name 



















