বির্তকিত সেই ১৫ ক্লাব নিষিদ্ধ, এখন সময়ের দাবি


প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০২৫, ৪:০০ অপরাহ্ন / ৫৮
বির্তকিত সেই ১৫ ক্লাব নিষিদ্ধ, এখন সময়ের দাবি

নাজমুল হাসান পাপনের আমলে ঢাকার ক্রিকেটের তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ নিয়ে ছিল একের পর এক অভিযোগ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল ঢাকার ক্রিকেটে নতুন ক্লাব ও ক্রিকেটারদের খেলতে না দেওয়া নিয়ে। এবার সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ পেরোয় মোট ১৮ ক্লাব। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন পর্যায়ের লিগে আছে মোট ১৫ ক্লাব। বাকি তিন ক্লাব হারিয়ে গেছে ঢাকার ক্রিকেট থেকে। ইতোমধ্যে টিকে থাকা ১৫ ক্লাবের মালিকানা ও নাম বদলের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি আসন্ন বিসিবি নির্বাচনেও বড় ভূমিকা রাখবে এই ক্লাবগুলো। দুর্নীতি ও বাড়তি সুবিধা নিয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ঢুকে পড়া ক্লাবগুলো কী এত পরিবর্তনের মাঝেও টিকে থাকবে- এমন প্রশ্নই জেগেছে ক্রিকেটপাড়ায়।বিসিবির সাবেক সভাপতি পাপনের ছত্রছায়ায় ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ক্লাব ক্রিকেটকে নিজের কব্জায় নেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ থেকে উঠে আসা বেশিরভাগ ক্লাবের সঙ্গেই জড়িত ছিল তার নাম। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশছাড়া হওয়া মল্লিক এখনো জড়িয়ে আছেন ক্লাবগুলোর সঙ্গে। ক্লাবগুলো অন্যদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হলেও এখনো তার সম্পৃক্ততা বিদ্যমান আছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। ক্লাবগুলো যখন তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ পেরিয়ে আসে, তখন অংশগ্রহণ ফি ৫ লাখ টাকার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ক্লাবঘর, ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদনের দরকার হতো। সিসিডিএম সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ১৫ ক্লাবের কোনোটিরই ক্লাবঘর, পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদনের কাগজ নেই সিসিডিএমের কাছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, সিসিডিএমের কাছে ক্লাবগুলো এই কাগজগুলো কখনো জমা দেয়নি।এ তথ্যেই স্পষ্ট, দুর্নীতি ও ক্ষমতার জোর দেখিয়ে ক্লাবগুলোকে তুলে আনা হয়েছিল ঢাকার ক্রিকেটে। এর জন্য অবশ্য সে সময় সিসিডিএমের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই যে দায়ী- সেটা স্পষ্ট করে বলা যায়। এ নিয়ে সিসিডিএম কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ রুবেল বলেন, ‘আমাদের কাছে দুদক কাগজপত্র চেয়েছে, সেগুলো আমরা দিয়েছি। গত ১০ বছরে ৯ বার তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে ১৮ ক্লাবের মধ্যে ১৫ ক্লাব এখনো আছে। যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, তাতে এসব ক্লাবের খেলারই সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল না। তবুও তারা নিয়ম ভেঙে, ভুল পথে এসে লিগে খেলেছে।’‘ভুল পথে’ ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ঢুকে পড়ার পরও অবশ্য সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিসিডিএম কিংবা বিসিবি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ায় বিসিবির সামনে শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার আছে। তবে এর আগেই দুদকের কাছে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ নিয়ে অভিযোগ যাওয়ায় আপাতত তাদের কাঁধেই আছে তদন্তের দায়িত্বভার। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত হওয়া তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ নিয়ে তদন্ত করছে দুদকের একটি দল। পাশাপাশি ক্লাবগুলোর মালিকানা ও নাম পরিবর্তন নিয়েও হচ্ছে বেশ তোড়জোড়। কারা ক্লাবগুলো কিনে নিয়েছে এবং তাদের অর্থের উৎস নিয়েও হচ্ছে তদন্ত।গত ১০ বছরে ঢাকার ক্রিকেটে এই ক্লাবগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে চায় দুদক। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে না। কারণ, জুলাই বিপ্লবের পর দেশছাড়া হয়েছেন সে সময়ের বেশিরভাগ সিসিডিএম কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে তদন্ত কীভাবে সম্ভব হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। তবে কাগজপত্রের গাফিলতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে আসা ১৫ ক্লাবের বেশিরভাগেরই ঢাকার ক্রিকেট থেকে ‘নিষিদ্ধ’ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, কোনো ক্লাবই নিয়ম মেনে আসেনি। যদি অবৈধভাবে ঢুকে পড়া ক্লাবগুলোকে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়, তাহলে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারাবে তারা। তাতে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের অন্য ক্লাবগুলো ক্ষেপে না উঠলেই হয়। অবশ্য এবার তাদের ক্ষেপে ওঠার খুব একটা সুযোগও নেই। কারণ, এই ক্লাবগুলোর কারণেই বেশিরভাগ ক্রিকেট সংগঠক নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেননি গত ১০ বছরে।অবৈধ উপায়ে ঢাকার ক্রিকেটে ঢুকে পড়া ক্লাবগুলোর মালিকানা ইতোমধ্যেই পরিবর্তিত হয়েছে। মালিকানা পরিবর্তিত হলেও ইসমাইল হায়দার মল্লিকের লোকজনের সংস্পর্শ এখনো আছে। ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করা না হলে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে তারা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সেই অবৈধ প্রভাব ঠেকাতে এই ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে বিসিবি কিংবা দুদক কী ব্যবস্থা নেয়-সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। এই অবৈধ ক্লাবগুলোর প্রভাব থেকে গেলে বিসিবিতে পরিবর্তন আনা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, ওই ১৫ ক্লাব থাকলে মল্লিক ও তার সহযোগীদের প্রভাব থেকেই যাবে বিসিবিতে। নিষিদ্ধ হওয়ার শাস্তি আসছে এমন পরিস্থিতি টের পেয়ে অবৈধ এইসব ক্লাবের বর্তমান মালিকের কয়েকজন আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

অথচ এই মালিকদেরই এখন ক্রিকেট বেচাকেনা ও ক্রিকেট নিয়ে ধান্ধাবাজির দায়ে জেলে থাকার কথা!