বকেয়া বিলের চাপে গত তিন বছর ধরে ভুগছে দেশের গ্যাস খাত। ডলারের সংকটে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারছিল না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। বকেয়া বিলের জন্য চাপ তৈরি করছিল সরবরাহকারীরা। ব্যাহত হচ্ছিল আমদানি। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। গ্যাসের বকেয়া কমিয়ে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিপুল বকেয়ার বড় অংশ ইতিমধ্যে শোধ হয়ে গেছে।পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বকেয়া জমিয়ে রেখে গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে। এরপরও নিয়মিত বিল পরিশোধের পাশাপাশি পুরোনো বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে ১৯ এপ্রিল বকেয়া নেমে এসেছে ২৪ কোটি ডলারে।পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বকেয়া জমিয়ে রেখে গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে। এরপরও নিয়মিত বিল পরিশোধের পাশাপাশি পুরোনো বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে ১৯ এপ্রিল বকেয়া নেমে এসেছে ২৪ কোটি ডলারে।সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস শেষেও গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল ৭১ কোটি ডলার। কিন্তু গত দেড় মাসে বেশির ভাগ বকেয়া পরিশোধ হয়ে গেছে। গত ৭ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ছয় ব্যাংকিং লেনদেন দিবসেই পরিশোধ করা হয়েছে ১৮ কোটি ডলার। চলতি মাসের মধ্যে বকেয়া ১০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে।২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলার–সংকট বাড়তে থাকে। জমতে থাকে গ্যাসের বকেয়া বিল। সংকট এড়াতে সে বছরের জুলাই থেকে টানা সাত মাস খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখে তৎকালীন সরকার। এতে গ্যাসের সরবরাহ–সংকট তৈরি হয়।গ্যাসের সরবরাহ–সংকটের কারণে একই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে তৎকালীন সরকার। সার্বিকভাবে বিগত সরকারের শেষ আড়াই বছর জ্বালানিসংকট অব্যাহত ছিল। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছিল লোডশেডিং। আবার একই সঙ্গে বকেয়া বিলও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নামে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্যাস দিতে পারেনি তৎকালীন সরকার।বিগত সরকার জ্বালানি খাতকে খাদের মধ্যে রেখে গেছে। বকেয়া জমিয়ে রেখে সেই খাদ থেকে ওঠা যাবে না। বকেয়ার বিলম্ব মাশুল দিতে হয়। এতে খরচও বেড়ে যায়। বিল পরিশোধে দেরি দেখে দরপত্রে বেশি দর আসত। এখন সেটি কমে এসেছে। জ্বালানি খাতে খরচ কমানোই মূল লক্ষ্য। আর খরচ কমলে ভর্তুকি কমবে।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকার জ্বালানি খাতকে খাদের মধ্যে রেখে গেছে। বকেয়া জমিয়ে রেখে সেই খাদ থেকে ওঠা যাবে না। বকেয়ার বিলম্ব মাশুল দিতে হয়। এতে খরচও বেড়ে যায়। বিল পরিশোধে দেরি দেখে দরপত্রে বেশি দর আসত। এখন সেটি কমে এসেছে। জ্বালানি খাতে খরচ কমানোই মূল লক্ষ্য। আর খরচ কমলে ভর্তুকি কমবে।এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের আগেই বকেয়া পরিশোধে তৎপর হয়ে ওঠে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, তিন বছর পর মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের পুরো বকেয়া শোধ করা হয়েছে।দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করে শেভরন। প্রতি মাসে শেভরনকে গড়ে প্রায় চার কোটি ডলার বিল পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে শেভরনের বকেয়া বিল বাড়তে থাকে। বিগত সরকারের সময় তারা কয়েক দফা চিঠি দিয়ে বিল পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছিল।সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া শোধ করছে। এটা ইতিবাচক। তবে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে এলএনজি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :