ময়মনসিংহের নান্দাইলে চর বেতাগৈর ইউনিয়নের ১৫৭ নং চরউত্তরবন্দ (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাবে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়টি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরাতন একতলা ভবনের দূর্গম এ বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের চরে অবস্থিত। সরেজমিন রবিবার (৩ মার্চ) দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিউদ্দিন অফিস কক্ষে বসে কাজ করছেন। পিছনেই মেঝে বসে রয়েছে তিন শিক্ষার্থী। খাতায় দুই শিফটে ছয় ক্লাসে ১১০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও দ্বিতীয় শিফটে ৩ শ্রেণিতে উপস্থিত পাওয়া যায় মাত্র ১৫ জন। শিক্ষক স্বল্পতায় একই সাথে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বসিয়ে পাঠদান চলছে। শিক্ষকের ৬ টি পদ থাকলেও এতদিন কর্মরত ছিলেন ২ জন। তার মধ্যে ১ মার্চ থেকে একজন মাতৃত্ব জনিত ছুটিতে যাওয়ায় তাঁর স্থলে প্রতিবেশি স্নাতক শ্রেণির এক ছাত্রিকে ভাড়া করে আনা হয়েছে। একই তারিখে অন্য এক শিক্ষক এসেছেন ডিপুটেশনে। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি নিজে অসুস্থ, তাছাড়া এরা একটু দূর্বল ছাত্র তাই এখানে এনে পাঠদান করার পাশাপাশি অফিসের কাজও করছি।
উত্তর পাশে একটি শ্রেণি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ৭ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন ভাড়া করে আনা বিএ ক্লাসের স্থানীয় শিক্ষার্থী স্বর্ণা আক্তার। এটা কোন শ্রেণি জানতে চাইলে তিনি জানান,এখানে ৩ শ্রেণিরই(৩য়, ৪র্থ ও ৫ম) শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। তবে তিনি মাতৃত্বজনিত ছুটিতে থাকা শিক্ষিকা মারুফা আক্তারের বদলে এসেছেন বলে স্বীকার করেন। অন্য একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ক্লাস নিচ্ছেন ১ মার্চ ২০২৪ থেকে ডিপুটেশনে আসা সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক মহসিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন বলেও জানান। সেই ক্লাসেও ৩ শ্রেনির ৫ জন শিক্ষার্থী দেখতে পাওয়া যায়। তিনি (শিক্ষক) স্বীকার করেন বলেন শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকাতেই এভাবে পাঠদান হয়ে আসছে। কক্ষের অন্যপাশে দেখা একটি চেয়ার ও টেবিল পাতা দেখা যায়। টেবিলের উপর মেলে রয়েছে বিসিএস পরীক্ষার গাইড, অংক কষার খাতাপত্র ও কলম। মহসিন জানান, তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাই ফাঁকে ফাঁকে একটু চর্চাও করেন।
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, এখানে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হয়না তাই অনেকেই তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফি উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ে নেই দপ্তরি তাই ঝাড়– দেওয়া থেকে শুরু করে সকল কাজ তাঁকেই করতে হয়। বিদ্যালয়ে ২ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও বিভিন্ন কারণে ১ জন ব্যস্ত থাকেন ফলে অন্য জনকেই সকল ক্লাস নিতে হয়। তাই ক্লাস কম হয় বলে শিক্ষার্থী আসতে চায় না- যার রেশ এখনো কাটেনি। তা ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে বলেও শিক্ষার্থী কমে গেছে। এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজিলাতুন্নেছা জানান, প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূরের এ বিদ্যালয়টিতে কোন শিক্ষক যেতে চাননা। বিদ্যালয়ের আশেপাশে বাড়ি এমন শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছেনা। তবুও সম্প্রতি একজন শিক্ষককে ডিপুটেশনে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগদানের ব্যবস্থা করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :