প্রায় ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা একটি জাহাজ জব্দ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। জাহাজটির ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করেছে জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই। শনিবার ভারতের নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জব্দ করা মাল্টার পতাকাবাহী ওই বাল্ক কার্গো জাহাজটির নাম এমভি রুয়েন। সোমালি জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইয়ের সময় এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী ওই জাহাজটি ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের ধারণা। মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। নাবিকরা সবাই বাংলাদেশী।
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং বিশেষ কমান্ডোদের একটি দল গত শুক্রবার এমভি রুয়েন জব্দ করার অভিযান শুরু করে। জাহাজটি গত বছর ১৪ ডিসেম্বরে ছিনতাই করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। পরে জলদস্যুরা অন্যান্য জাহাজ ছিনতাই করতে এমভি রুয়েন ব্যবহার করা শুরু করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, এমভি রুয়েনকে কোণঠাসা করতে ভারতের যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা থেকে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। এছাড়াও নৌবাহিনীর আরও কয়েকটি জাহাজ, ড্রোন, উড়োজাহাজ এবং মেরিন কমান্ডোরা এই অভিযানে অংশ নেন।
একটি ভারতীয় উড়োজাহাজ এমভি রুয়েনের উপর দিয়ে উড়ে গেলে জলদস্যুরা সেটি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে এ অভিযানের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জাহাজের ডেকের উপর দিয়ে একজন জলদস্যু হেঁটে যাচ্ছে। সে তার রাইফেল দুইবার তাক করে এবং নৌবাহিনীর উড়োজাহাজ লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ভারতীয় নৌবাহিনী ওই জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে আর জাহাজটিতে কোনো বেসামরিক তাদের হাতে আটক থাকলে তাদের ছেড়ে দিতে বলে। এ নিয়ে কয়েকঘণ্টা ধরে চাপাচাপি শেষে দস্যুরা পরাস্ত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে।
শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী সফলভাবে এমভি রুয়েন এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারতীয় নৌবাহিনী জানায়, এই অভিযানে কেউ হতাহত হয়নি। তারা এমভি রুয়েন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেটিতে অবৈধ কোনো অস্ত্র বা অন্যান্যা অবৈধ কিছু আছে কিনা তা তল্লাশি করে দেখেছে। সোমালি জলদস্যুরা গত এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে তাদের আক্রমণের পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত তারা সুপ্ত অবস্থায় ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :