সেবা দেয় না, পাত্তাও দেয় না বিমান


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৫, ২০২৪, ৪:৫৯ অপরাহ্ন / ৪০
সেবা দেয় না, পাত্তাও দেয় না বিমান

দুবছরের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ (থার্ড টার্মিনাল) এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ভালো সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হলে ২ বছর পর কেড়ে নেওয়া হবে তাদের দায়িত্ব। এমন কথা উল্লেখ করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করছে। তবে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে যাত্রীর বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গোর মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে বোঝায়। ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ৩৫টির মতো এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা (ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যাস্ট্রা ছাড়া)। তবে মোটা অঙ্কের চার্জ দিয়েও তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এয়ারলাইন্সগুলোর।

এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির (এওসি) ঢাকার চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরের বিমানকে দেওয়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ প্রতিবেশী দেশ এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চার্জ থেকেও অনেক বেশি। বিমানের শিফট পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ। তারা চেক-ইন কাউন্টার, গেট, র‍্যাম্প, লোডিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্টাফ দিতে পারছে না। এতো চার্জ দেওয়ার পরেও প্রতিটি বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বিমানবন্দরের নানা কাজের জন্য কমবেশি ৭০ জন করে নিজস্ব জনবল নিয়োগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলোর অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, টিকিটের দামের উপর প্রভাব ফেলছে। ভালো সার্ভিস দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং প্রতিষ্ঠানের (বিমান) সঙ্গে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর যে সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) ছিল তার বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে না।তিনি বলেন, টার্মিনাল-১ এবং ২ এর কার্গো হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থাপনা দেখে টার্মিনাল-৩ এর হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দুবছরের জন্য বিমানকে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সরকারের সিদ্ধান্তকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে আমরা প্রস্তাব করছি- এভিয়েশন খাতের উন্নয়ন চাইলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরে যেভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার নিয়োগ দেওয়া হয়, আমাদের বিমানবন্দরেও যেন একইভাবে নিয়োগ হয়।বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের সুবিশাল তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর থেকে একসঙ্গে কমবেশি ২০টি এয়ারক্রাফটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে হবে। এটি পরিচালনার জন্য বিমানের মোট ৩ হাজার ৮৭৮ জন জনবল দরকার। বর্তমানে বিমানের জনবল ২ হাজার ৪৯৪। আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের আরও ১৩৮৪ জনকে নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যা মোটেও সহজ নয়।চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর বিমানের সক্ষমতা জানতে তাদের ডেকে পাঠায় মন্ত্রণালয়। সেদিন মন্ত্রণালয়কে বিমান নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে একটি ব্রিফিং করে। তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজের জন্য জনবল, যন্ত্রপাতি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিস্তারিত পরিকল্পনা জানায়। তারা টার্মিনাল চালাতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে।

ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা করতে বিমান বাংলাদেশের জনবল আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এয়ারলাইন্সগুলো যেহেতু বিমানের সেবা নেয় সেক্ষেত্রে তারা বিমানের গ্রাহক। কিন্তু বিমান গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়ে ফোকাস করে না, সমস্যার সমাধান দেয় না। বিমান যতই জনবল বাড়াক কিংবা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হোক না কেন, গ্রাহক কি চায় (এয়ারলাইন্স), তাদের সমস্যা কি, সেসব বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি এয়ারলাইন্স যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে সেখানকার চেক-ইন কাউন্টারের পাশে কর্মী দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যাগেজ সেবা, কার্গো সেবা—সর্বত্র পর্যাপ্ত কর্মী দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কর্মী দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিমান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যারাবিয়া যাত্রীদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার জন্য প্রতি ফ্লাইটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দুই হাজার ২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করে। কার্গোর জন্য প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত শূন্য দশমিক শূন্য সাত সেন্ট (মার্কিন ডলার) চার্জও প্রদান করে। এসব ব্যয় সত্ত্বেও বিমান তাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মাত্র দুই থেকে তিনজন কর্মী দেয়। বিমানবন্দরে একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি স্টেশন ম্যানেজার বা কাউন্টার সুপারভাইজারই যথেষ্ট। তবে, বিমানের পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় এয়ার অ্যারাবিয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০ জনেরও বেশি নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে ইন্ডিগো এয়ার বিমানবন্দরে ২৫ জন এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ৬০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ম্যানেজার সুহেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিমানকে পয়সা দিয়েও সেবা পাওয়া যায় না। আমরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ফি দিলেও বিমানবন্দরে কাতারের ৮২ জন স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে কাজ বিমানের করার কথা সে কাজ আমাদের নিজেদের লোক দিয়ে করাতে হচ্ছে। তারা পয়সা নিয়েও সেবা দিচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে না। এখন বেশি কিছুর দাবি নেই। আমরা শুধু চাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, তারা সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক।

(সংগ্রীহিত)

নামাজের সময় সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:১২ অপরাহ্ণ
  • ৩:৫৬ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ৬:৫৩ অপরাহ্ণ
  • ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ