মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই স্বাধীনচেতা। জন্মের প্রথম ক্ষণেই চিৎকার করে বলতে চায় আমি আসছি।আমার অধিকার আছে এই বিশ্ব ভুবনে। আমরা ভারত উপমহাদেশের ব-দ্বীপ এই বঙ্গভূমিতে বসবাস করি হাজার বছর ধরে কিন্তু আমরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হাজারো যুদ্ধ সংগ্রাম করেছি হাজারো বছর ধরে। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে কাঙ্খিত স্বাধীনতা পাইনি। অবশেষে ১৯২০ সালে এই বাংলার মুক্তির দূত,হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।
ভারতবর্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অর্থাৎ ব্রিটিশদের অধীনে ছিল প্রায় দুইশত বছর।
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিদায় নেয়ার আগে ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে ভারতবর্ষকে দুর্বল করে দেয়। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান নামে থাকি। কিন্তু পাকিস্তানীদের বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করেন ১৯৪৮ সালে।
যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ মেনে নিতে পারে নাই। শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। বাংলা ভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এ সংগ্রাম পরিচালিত হয়। বাংলা ভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত আন্দোলনে রফিক,সফিক, বরকত জব্বার সহ নাম নাজানা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। এর পর ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ নেতৃবৃন্দ বুঝে গেলেন যে পাকিস্তানের সাথে থাকা আর সম্ভব না তাই তারা কৌশলে আন্দোলন,সংগ্রাম এগিয়ে নিতে থাকলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবীর মধ্যেই আমাদের স্বাধীনতা নিহিত ছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পান। এবং ১৯৭০ সালে সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বঙ্গবন্ধু প্রমআন করলেন সাধারণ মানুষ তার নেতৃত্বে বিশ্বাসী। তিনিই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা। ১৯৭১ সালের ৭-ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সে ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
যেখানে তিনি বলেন,”এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” ।
শুরু হয়ে গেলো মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঘুমরত নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর অপারেশন সার্চ লাইট নামে জঘন্য ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে চালায়। ঐ রাতে ২৫ শে মার্চ শেষে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এসময় বঙ্গবন্ধু ইপিআরের মআধ্যমএ তারবার্তা সব মহকুমার আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। স্বাধীনতা ঘোষণার সেই দুর্লভ তারবার্তার তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। ঐ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।শুরু হয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ।র্দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। তবে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে। উল্লেখ্য ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর তারবার্তাটি অনেকেই পেয়েছিল। কিন্তু ঐ ঐতিহাসিক তারবার্তার একমাত্র কপি রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সংগ্রামী কমাড্যান্ট মানিক চৌধুরীর পরিবারের কাছে।
মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামী ও মুজিবীয় শুভেচ্ছা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
আপনার মতামত লিখুন :