বরারবরই কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থাকে সবার চোখের আড়ালে। সেই সুযোগে এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেতে ওঠেন দুর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যে। গার্মেন্টস মালিকদের জিম্মি করে শত শত কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্য হয় এখানে। কিন্তু বিয়ষটি কখনোই সামনে আসেনা। নিজেদের দুর্বলতা ও প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে গার্মেন্টস মালিকরাও বিয়ষটি নিয়ে কথা বলেন না। যে কারণে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের পিয়ন থেকে শুরু করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা প্রায় সবাই জড়িয়ে পড়েছেন ব্যাপক দুর্নীতিতে।তাদেরই একজন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের গ্রহন ও প্রেরণ শাখার অফিস সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ রবিউল ইসলাম।
বাৎসরিক প্রায় ৫ লাখ টাকা বেতনের চাকরি করেন তিনি। অথচ কিনেছেন কোটি টাকার জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট। কোথা থেকে এলো এতো টাকা? কিভাবে এতো সম্পত্তির মালিক হলেন তিনি? এমনই সব প্রশ্ন উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের হওয়া এক অভিযোগে বেরিয়ে এসেছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির থলের বিড়াল। ওই অভিযোগে দেখা যায়, ঝিনাইদহের সাদেকপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কাস্টমসে কর্মরত আছেন। এক সময় অতিরিক্ত কমিশনার শামীমা আক্তারের পি.এ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে সুযোগ বুঝে বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। গার্মেন্টস মালিকদের দায় অব্যাহতি, ফাইল পাশসহ বিভিন্ন সুপারিশের কাজ করে ভরেছেন নিজের পকেট।
অভিযোগ সুত্রে দেখা যায়, রাজধানীর কল্যানপুর শহীদ মিনার রোডে কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে বসবাস এই রবিউলের। ব্যবহার করেন অত্যাধুনিক প্রাইভেট কার। তার স্ত্রী-সন্তানরাও নাকি পৃথক পৃথক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। এছাড়া রবিউল উত্তরায় স্ত্রীর ও শ্যালকদের নামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে কোটি টাকা মূল্যে ৪ তলা সুবিশাল প্রাসাদ রয়েছে তার। জিলা স্কুলের সামনে রয়েছে গাড়ি পার্কিংসহ ২টি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। কুষ্টিয়ার বাড়ানি মৌজায় স্ত্রীর নামে কিনেছেন ২ বিঘা জমি। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা সদর থানার বামন পাড়াতেও রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের কয়েক বিঘা জমি। কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের মাছ বাজারের পেছনে দুটি দোকান রয়েছে তার। যার বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।এছাড়া নিজ জেলা ঝিনাইদহের সদর সার্কিট হাউজের সামনে ও পাগলা কানাই মোড়ে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন রবিউল। শৈলকূপা থানার সাদেকপুর মৌজায় ২৫ বিঘার বেশি জমি কিনেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী হয়েও কিভাবে তিনি এসব সম্পদের মালিক হলেন তা এখন সবার কাছেই বিস্ময়।
এখানেই শেষ নয়, চতুর এই সরকারি কর্মচারী শুধু নিজ ও স্ত্রীর নামেই সম্পদের পাহাড় গড়েননি। নিজের ভাই ও শশুর বাড়ির আত্মীয়দের নামেও কিনেছে সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে তার মেজ ভাই মোঃ বেলাল হোসেন ও শশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও বন্ড কিনেছেন তিনি। বিনিয়োগ রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসাতেও। এছাড়া বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছে রবিউলের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কল্যাণপুরের প্রায় কোটি টাকার ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশের মালিক নিজে ও বাকি ৫০ শতাংশ স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন ধুর্ত এই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। কুষ্টিয়ার মজমপুরে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি জায়গায় ৩ তলা বাড়ির মূল্য মাত্র সাড়ে ৩৩ লাখের মত দেখিয়েছেন তিনি। অথচ সেখানে জমির মূল্যই কোটি টাকার বেশি। এছাড়া অধিকাংশ সম্পদের তথ্যই গোপন করেছেন রবিউল।
কথায় আছে মাথা যেদিকে যায়, গোড়াও যায় সেদিকে। তাই যার ছত্রছায়ায় থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন রবিউল তৎকালীন সেই অতিরিক্ত কমিশনার শামীমা আক্তারকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রবিউলকে তার ব্যাক্তিগত সহকারির পদ থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তিতে রবিউলের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানেন না বলেও জানান শামীমা আক্তার।
অতিরিক্ত কমিশনার এভাবে নিজের দায় এড়ালেও, বাস্তবে কি তিনি নিজের অধীনস্ত দুর্নীতিবাজ এই কর্মচারীর দায় এড়াতে পারেন? যার মদদে বেপরোয়া রবিউল তিনি কি থেকেই যাবেন সবার আড়ালে? বিস্তারিত আসছে পরের পর্বে—–
আপনার মতামত লিখুন :