বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে দুর্নীতি, অনিয়ম, এবং নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচিত একজন ব্যক্তি হলেন মশিকুর রহমান, যিনি ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিবিএ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে বিমান একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং নানা দুর্নীতির চক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
মশিকুর রহমানের উত্থান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার
মশিকুর রহমান ১৯৯৯ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সিবিএ’র সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভেতরে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার পদ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শ্রমিক নিয়োগ, আদম পাচার, এবং সোনা চোরাচালানের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এছাড়া, তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিমানবন্দরের কর্মীদের স্থানান্তর ও পদায়ন করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিবরণ
বিমানের বিভিন্ন শাখায় অর্থ আত্মসাৎ, রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার, এবং বিমানবন্দরের মাধ্যমে আদম পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে মশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিমানবন্দরের ‘ফরেন বিলিং’ শাখার অর্থ আত্মসাৎ, কর্মীদের চাকরিতে নিয়োগে ঘুষ লেনদেন, এবং অতিরিক্ত ব্যাগেজ ফি আত্মসাতের মতো অভিযোগও রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে দুর্নীতির প্রসার
অভিযোগ রয়েছে, সিবিএ’র সভাপতি থাকাকালীন মশিকুর রহমান তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। দুর্নীতির প্রতিবাদকারী সহকর্মীদের হেনস্তা করারও অভিযোগ পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর পর তিনি বিমানবন্দরের কার্যক্রম অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন, যা দেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করে।
বিভাগীয় মামলা ও অনুসন্ধান
২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মশিকুরসহ সিবিএ’র কয়েকজন নেতাকে তলব করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে তার অপরাধগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি ও মশিকুরের কানাডা অবস্থান
বর্তমানে মশিকুর রহমান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টরেন্টো স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, কানাডায় অবস্থান করে তিনি এখনও বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন এবং অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজের স্বার্থসিদ্ধ করছেন। এছাড়া, কানাডায় বসে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থপাচারের অভিযোগও উঠেছে।
দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি
দেশের স্বার্থে এবং বিমানের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে মশিকুর রহমানকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কানাডা স্টেশন ম্যানেজার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি উঠেছে। তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উদঘাটন করে দেশের সুনাম রক্ষা এবং বিমানবন্দরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :