ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জনাব সবুজ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আমাদের সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের অনিয়ম, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, ভুয়া বিল উত্তোলন এবং ব্যক্তিগত সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি—এসব অভিযোগ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্রকল্পে অনিয়ম ও ভুয়া বিল উত্তোলন
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পগুলোর উন্নয়নকাজে সবুজ উদ্দিন খান সরকারের তহবিল থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মহাসড়ক উন্নয়নে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, সড়কটি ৩৫ ফুট চওড়া করার নামে মাটি ভরাটের খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বাস্তবে মাত্র ২০ কোটি টাকার মাটি ব্যবহার করা হয়। অনেক স্থানে ঠিকাদারদের সহায়তায় ভুয়া বিল উত্তোলন করে সরকারের বিপুল অর্থ লোপাটের কৌশল নিয়েছেন তিনি।
এছাড়া, ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করিয়ে প্রকল্পের মান নষ্ট করেছেন। অভিযোগ অনুসারে, সড়কে ৭০% পাথর ও ৩০% বালির পরিবর্তে ৪০% পাথর ও ৬০% বালি ব্যবহার করেছেন, যা সড়কের স্থায়িত্ব ও গুণগত মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সড়কের ফুটওভার ব্রিজ, বাস স্ট্যান্ড ইত্যাদি অংশেও নিম্নমানের ইট, বালু ও পাথর ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির কৌশল চালানো হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে থেকেই জনাব সবুজ উদ্দিন খান ব্যাপক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সাভারে সড়ক বিভাগের স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রায় ৩ একর জমিতে তিনি সরকারি মালামাল সংরক্ষণ না করে আবিদ মনসুর নামের একজন ঠিকাদারকে হট মিক্সার প্ল্যান্ট স্থাপনে সহায়তা করেছেন। এভাবে প্রায় ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এই আবিদ মনসুর নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটান এবং নানা সুবিধা আদায় করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সবুজ উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও সন্দেহজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগে উঠে এসেছে, ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ৬ তলা বিলাসবহুল বাড়ি, বসুন্ধরা সিটিতে চারটি দোকান, এবং ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলিতে নাম-বেনামে বিভিন্ন সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তাঁর স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের নামেও বিভিন্ন জায়গায় জমি, বাড়ি এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি কেনা হয়েছে, যা সাধারণ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। তাঁর এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের আর্থিক কার্যক্রম ও সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দেশের সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে জনাব সবুজ উদ্দিন খানের মতো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি মনে করেন সাধারণ মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :