সরকারি চাকরি, এ যেন সোনার হরিণ। একথা বেশ পুরোন। এখন সরকারি চাকরি যেন পরশ পাথর। ছোঁয়া লাগলেই অঢেল সম্পদ আর বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়া। শুনতে অবাক লাগলেও দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থা অনেকটা এমনই। এমনই এক সরকারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস। যেখানে উর্দ্ধতর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত প্রায় সবাই কোটিপতি।
তাদেরই একজন ঢাকা কাস্টমস অফিসের ট্রলিম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির আরকে জ¦লন্ত উদাহারন তিনি।
জামালপুর সরিষাবাড়ীর বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান ২০১০ সালে ঢাকা কাস্টমসে ট্রলিম্যান হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনের এই কর্মচারীর ঝুলিতে এখন শত কোটি টাকা। টাকার গরমে ২০২০ সালে ঢাকা কাস্টমস্ এজেন্ট এসোসিয়েশনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন তিনি। টাকার পাশপাশি পেয়ে যান ক্ষমতাও। এরপর যেন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শাহজাহান।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগ বলা হয়েছে চোরাকারবারীদের সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা এই ট্রলিম্যান। যাত্রীদের লাগেজ চুরি, লাগেজ থেকে দামি জিনিসপত্র সরানো, অবৈধ জিনিষ কৌশলে পাচার করা, এছাড়া কাস্টমসে ধারা পড়া বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী বাইরে বিক্রির সিন্ডিকের অন্যতম সদস্য তিনি। এমনকি স্বর্ণ চোলাচালেও জড়িয়েছে তার নাম। অভিযোগ রয়েছে ২০২০ সাল থেকে লাগেজ পার্টি ও স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য তিনি। অর্থ পাচারের সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই ট্রলিম্যানের বিরুদ্ধে। আর এখান থেকেই তিনি কোটিপতি ট্রলিম্যান বনে গেছেন।
দুদকে দায়ের করা অভিযোগ আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর দক্ষিণখানে ইসলামবাগে মোহাম্মদ শাহজাহানের দশতলা ভবনটির মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আশকোনায় সোসাদী স্কাই ভিউ ভবনের চতুর্থ তলা কিনেছেন প্রায় ৮ কোটি টাকা দিয়ে। একই এলাকায় কাউন্সিলর অফিস সংলগ্ন ১৮ কাঠা জমি কিনেছেন এই ট্রলিম্যান। প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যে ওই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা ১ নাম্বার সেক্টরে ৫ নম্বর রোডে রয়েছে আরেকটি চারতলা ভবন। ১৮ নাম্বার সেক্টরে একটি প্লটে বেশ জোরেসরেই চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। আসিয়ান সিটিতে রয়েছে ১ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন।
শুধু তাই নয়, চলনে বলনে তার আভিজাত্যের ছাপ। জামালপুরে শীর্ষ ধনীর তালিকায় রয়েছে মোহাম্মদ শাহজাহানের নাম। সরিষাবাড়ীতে নিজ গ্রামে ও শশুর বাড়ী এলাকায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন এই ম্যাজিকম্যান। চড়েন বিশালবহুল কোটি টাকার গাড়িতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কাস্টমসের কয়েজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এই ট্রলিম্যানের শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার পরশ পাথরের গল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কানে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের পরও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কখনো শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার দাপটে কৌশলে তা দমিয়ে দিতেন প্রভাবশালী এই ট্রলিম্যান।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতির এতো শুধু এক পেয়াদা মাত্র। কাস্টমসের রাঘব বোয়ালরা এখনও রয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোহাম্মদ শাহজাহান সংগে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়াযায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :