উন্নয়নের জোয়ার দেখিয়েছেন, কিন্তু মানুষের অন্তরে স্থান নিতে পারেননি : সরকারের উদ্দেশে চরমোনাইয়ের পীর
প্রকাশের সময় : জুলাই ৩, ২০২২, ১২:৪৭ অপরাহ্ন /
১৪৬
সরকার উন্নয়নের জোয়ার দেখিয়েছে, কিন্তু মানুষের অন্তরে স্থান নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক উন্নয়নের জোয়ার আপনি দেখিয়েছেন। কিন্তু …মানুষের অন্তরে আপনি স্থান গাড়তে পারেন নাই।’
‘ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ’সহ ১৫ দফা দাবিতে এ সমাবেশে কথাগুলো বলেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আজ শনিবার এ সমাবেশ ও গণমিছিল হয়।
বানভাসিদের উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসবে বিপুল অর্থ ব্যয়ের সমালোচনা করেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। চরমোনাইয়ের পীর বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, ড্যান্স, গান, বেহায়াপনার মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে উৎসবের জন্য আপনি শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু সিলেটের মতো একটি বিভাগ, বিভিন্ন জেলা আজকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে, হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে মাত্র ৩০ লাখ টাকা, ৬০ লাখ বরাদ্দ—এটা বাংলাদেশের জনগণ কখনো প্রত্যাশা করে না।
শুকনা মৌসুমে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি আটকে রাখা, বন্যার সময় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ার সমালোচনা করেন চরমোনাইয়ের পীর। তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের পানি প্রয়োজন, তখন আটকে দেয়। আর যখন প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। পানির নিচে আমার বোনদের, বাচ্চাদের মরা লাশ ভাসতে দেখে আমাদের সহ্য হয় না।’
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ আগে উদ্ধার হবে, তারপর ভারতের স্বার্থে আমরা নজর রাখব। কিন্তু সম্পর্ক রাখতে গিয়ে আমাকে জবাই হতে হবে, এটা সম্পর্ক নয়, এটা মূলত অতি উৎসাহী, অযৌক্তিক ও সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী একটা সিদ্ধান্ত।’
বর্তমান সরকারের সময় পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের কড়া সমালোচনা করেন রেজাউল করিম। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ করে, সেই ভাইবোনদের বলব, আমরা তো রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্য। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামি শিক্ষা বাদ দেবে, আর আপনার সন্তানগুলো ভবিষ্যতে নাস্তিক্যবাদমনা তৈরি হবে, মুসলমান হয়ে এটা তো আপনি কখনোই সমর্থন করতে পারেন না।’
সরকার মহাসংকেট আছে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ। তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের খুশি করতে গেলে দাদা বাবুরা অখুশি হয়ে যায়, আবার দাদা বাবুদের খুশি করতে গেলে আপনারা অখুশি হয়ে যান। দেখেন অবস্থা, এ দেশে দুর্নীতিবাজদের যদি নিয়ন্ত্রণ করে আপনারা খুশি হবেন। কিন্তু দুর্নীতি চালু না রাখলে দুর্নীতিবাজেরা নাখোশ হয়ে যায়। অর্থাৎ উভয়সংকটে পড়ে গেছে। এ জন্য সরকারের জন্য দোয়া করা দরকার। আমার বিশ্বাস, এ সরকারে পতন হবে চূড়ান্ত অপমানজনক।’
বন্যার সময় সরকারের আম ও ইলিশ কূটনীতির সমালোচনা করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যখন সিলেটে পানিতে সব ডুইব্বা মরতেছে, তখন আমাদের প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা আম পাঠাইতেছেন মোদির জন্য। কোন দেশে বসবাস করি, বলব কী, ইলিশ পাঠানোর, আম পাঠানোর আর সময় পায় নাই। লজ্জাও নাই, বিনা ভোডের (ভোটের) সরকার…।’
আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যেন কোনো অবস্থাতেই প্রহসনের নির্বাচন না হয়, নৈশ নির্বাচন না হয়। ইভিএমের নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ চায় না। কাজেই ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। ব্যস, এটাই কথা, এইটাই জনগণের সিদ্ধান্ত।’
এ সময় সৈয়দ ফয়জুল করিম সাভারে ছাত্রের পিটুনিতে নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে যে শিক্ষকেরা ধর্মীয় উসকানি দেন, ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ান, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে একটি মিছিল পুরানা পল্টন মোড়, বিজয়নগর হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় পুরানা পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :