বিদেশের পাসপোর্ট প্রকল্পে দুহাতে কোটি কোটি টাকা ঢেলে নাগরিকত্ব নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রভাবশালী অনেকে। তবে অর্থলগ্নি করে পাওয়া পাসপোর্টগুলো ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা কানাডার নয়, বরং অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, ডমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া কিংবা ভানুয়াতুর মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের!
গড়ে এককালীন দেড় থেকে দুই লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে নাগরিকত্বসহ পাসপোর্ট দেয় অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, ডমিনিকা, গ্রেনাডা, মাল্টা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া ও ভানুয়াতুর মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র। এমনকি কয়েকটি দেশ সরাসরি তাদের জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে অর্থ জমা নেয়। আবার কয়েকটির আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই নাগরিকত্ব মেলে। এমন রকমারি বিজ্ঞাপন এখন হরহামেশাই চোখে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দ্বীপগুলোয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তৎপরতা এবং অর্থ পাচার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ৫ বছর আগেই প্রতিবেদন দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা। এর সূত্র ধরে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এক বিশেষ সভা ডাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, পুলিশ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছিলেন। এছাড়া অর্থ পাচারের বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ক্যারিবীয় পাসপোর্টে ‘নো ভিসা’দেওয়ার আগে বিএফআইইউ-এর মতামত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এই সভা থেকেই দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখনই উঠে আসে উচ্চপদস্থ অনেক সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ীর নাম। তবে রহস্যজনক কারণে তালিকা প্রণয়নের কাজ আর বেশিদূর এগোয়নি।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এই পাসপোর্টের বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাসপোর্ট ক্যারিবীয় নেয়ার সময় বাংলাদেশের যেসব ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, সেই ঠিকানায় এদের কেউই থাকে না।কেউ কেউ ব্যবহার করেছেন ভূয়া ঠিকানা, আবার অনেকের ঠিকানা সঠিক হলেও রয়েছেন আড়ালে।
অখ্যাত দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেয়ার নেপথ্যে যদি কোন অসৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তবে তার মধ্যে অন্যতম এক উদ্দেশ্য হতে পারে অর্থপাচার বলে মনে করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির ধারণা, দ্বীপরাষ্ট্র গুলোর দূর্বল ব্যংকিং চেইন, বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তথ্য না পাওয়া এমনকি সেসব দেশের সাথে তথ্য বিনিময় চুক্তি সক্রিয় না থাকায় হয়তো কালো টাকার মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন।
সম্প্রতি ক্যারিবীয় দ্বীপের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের বিষয়ে কড়া নজরদারি শুরু করেছে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। একারণে অনেকে দেশ ছেড়েছেন, কেউ আবার বাসা এবং অফিস পরিবর্তন করে চলে গেছেন অনেকটা আত্মগোপনে।
আপনার মতামত লিখুন :